সংখ্যায় অল্প হলেও আজও মা ঠাকুমারা সেলাই করেন “ঐতিহ্যের কাঁথা”

মলয় দে ,নদীয়া :- কাঁথা সেলাই ভারতবর্ষের প্রাচীনতম সূচিকর্মের নিদর্শন। যা আজও এশিয়ার লক্ষ লক্ষ মহিলারা এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন তাদের জীবিকা হিসাবে বা ব্যবহারের তাগিদে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে এই লুপ্ত প্রায় ধারাবাহিকতার মর্যাদা দেয় কুটির শিল্পের।ব্যুৎপত্তিগত ভাবে কোন মানে না থাকলেও, সংস্কৃতে কাঁথা শব্দের অর্থ ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো। গ্রাম্য মহিলাদের মিতব্যয়িতার ফলে গড়ে ওঠা এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে রূপকথার গল্প, ধর্মের উপাখ্যান, ব্যক্তিগত জীবনের নানা উত্থান-পতনের কথা , জীবনের চাওয়া-পাওয়া আশা হতাশা এমনকি গ্রাম বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য উঠে এসেছে এই শিল্পকর্মে যা মহিলাদের ধৈর্যের চূড়ান্ত গুণ হিসেবে স্বীকৃত। পাঁচশো বছর আগে কবি কৃষ্ণ দাস কবিরাজের লেখা শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে চৈতন্যদেবের মাতা একটি কাঁথা পাঠিয়েছিলেন সে কথা উল্লেখ আছে।

ছোট শিশুদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর, টাকার থলি বটুয়া হিসাবে, মৃদু শীতে বা বর্ষার ঠান্ডায় দেহ আবরণ হিসেবে, ব্যক্তিগত জিনিস লুকিয়ে রাখা, পবিত্র কুরআন শরীফ জড়িয়ে রাখা, জায়নামাজ, বালিশের কভার , বিছানার চাদরে, টেবিল ক্লথ রুমাল টুপি নানা ক্ষেত্রে নিপুন শিল্পকর্ম ফুটে ওঠে।তবে নকশীকাঁথার বেশিরভাগ এখন বাণিজ্যিকভাবে ক্রয় বিক্রয় হয়। পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের নকশী কাঁথার মাঠ যেমন উঠে এসেছে, তেমনি ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মত বাগধারাও জনশ্রুতি হিসেবে চিরন্তন।

বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন বুটিক সেন্টার। সেলাই নিয়ে পড়াশোনা ও করছেন অনেকে কিন্তু আগেকার মা ঠাকুমার সেলাইয়ের সংখ্যার অতীব কতিপয় সংখ্যায়। এখনো নদীয়া সহ বিভিন্ন জেলার গ্রামে, ব্যাবসায়িক ভাবেই মা ঠাকুরমারা পুরনো ছেঁড়াশাড়ি দিয়ে, বা নানা বাতিল বস্ত্র দিয়ে মজুরির বিনিময়ে সেলাই করে থাকেন কাঁথা।বর্তমান এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই শিল্পকর্মের নিদর্শন আজ খুঁজে পাওয়া যাই নদীয়া ও বিভিন্ন জেলার গ্রামে।