গত দশদিন ধরে নদীয়ার শান্তিপুরের নৃসিংহপুর অঞ্চলের দশ-বারোটি সর্টেক্স এর মধ্যে বন্ধ প্রায় সবকটি, খোলা মাত্র দুটি!
জেলা এবং জেলার বাইরে বিভিন্ন মান্ডি বা আরৎ থেকে কিনে নিয়ে আসা ধান খামার বা পারণে সেদ্ধ শুকনো হওয়ার পর, হাস্কিংয়ে ভাঙানো হয়। এরপর উৎপাদিত চাল থেকে কাল বা লাল চাল , মাটির টুকরো আলাদা করে পরিষ্কার করা হয় সর্টেক্সে।
আগে অবশ্য ধান থেকে চাল তৈরি করার মধ্যে সর্টেক্স এর ব্যবহার ছিলো না ! বর্তমানে বছর পাঁচেক হলো এই মেশিনের অত্যাধিক কদর বেড়েছে। 30 -40 লক্ষ্য টাকা ব্যয় করে তখন 80 -85 টাকা প্রতি কুইন্টাল পারিশ্রমিক পাওয়া যেতো, মেশিনের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে ব্যাবসায়িক প্রতিযোগিতাতে মজুরি কমে দাঁড়িয়েছে 40 টাকা কেজি। গত বছরে অবশ্য পাশাপাশি কানলা বাদকুল্লার বাজার দর অনুযায়ী ছিলো 30 টাকা। সর্টেক্স মালিকদের জোরালো আবেদনে স্থানীয় বাজার কমিটির হস্তক্ষেপে 40 টাকা করা হয়। বর্তমানে 60 টাকা প্রতি কুইন্টাল হিসাবে দাবী করা এক সর্টেক্স মালিক লিখন চন্দ্র মান্না জানিয়েছিলেন ” আমাদের মেশিন কোম্পানির একাউন্টেন্ট এর হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র ইলেকট্রিসিটি লেবার চার্জ এবং মেশিনের ডেপ্রিসিয়েশন মিলিয়ে 55 টাকা প্রতি কুইন্টাল খরচ হয়! একই সাথে ধান চালের ব্যবসা হওয়ার কারণে পৃথকভাবে হিসাব আগে ঢোকেনি আমাদের মাথায়! যখন থেকে বুঝেছি তখন থেকে, আর ব্যবসার প্রতি আগ্রহ নেই।
অপর এক 60 টাকা কুইন্টাল প্রতি দাবী করা সর্টেক্স মালিক অনুপ গাইন জানিয়েছিলেন “কালনা, বাদকুল্লা বা আমাদের এখানে এখনো 40 টাকা মজুরি তে কাজ করছে যারা, তারা কিভাবে লাভ করছে আমি জানিনা। তবে এর আগেও প্রশাসনের, কথা রাখতে গিয়ে কোভিদ পরিস্তিতির মধ্যে মজুরি বাড়ানোর কথা বলিনি। কিন্তু আমাদের শ্রমিকদের এই পরিস্থিতি সামাল দিয়েও আর চালাতে পারছি না।
অন্যদিকে খোলাদার অর্থাৎ প্রায় আড়াইশো জন এই পেশার সাথে যুক্ত সর্টেক্স কাজ দিয়ে সহযোগিতা করা ছোটো ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কালিপদ বাগচী জানিয়েছিলেন, প্রথমে চার জন মিলে, পরবর্তীকালে দুজনে মিলে, তারও পরবর্তীতে নিজে একা একটি সর্টেক্সের মালিক হয়েছেন অনেকেই। যদি লাভ না থাকতো, তাহলে ব্যবসায়িক এত আগ্রহ কিসের? আসলে প্রথমে অত্যাধিক লাভ করেছে, তা থেকে ক্রমশ সরে আসতে ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে! তবে এর ফল ভয়ঙ্কর! বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে এই কভিদ পরিস্থিতির মধ্যে, বাজারে আপাতত না হলেও কিছুদিন বাদে বাজারে চালের যোগান কমবে, ব্যবসায়ীদের হয়তো লাভ হবে কিন্তু সাধারণ মানুষকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে চাল।
ওই অঞ্চলে 40 টাকা মজুরি সচল রাখা এক সর্টেক্স মালিক বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, আমরা চারজন মিলে সর্টেক্স চালিয়ে দু বছরের 14 লাখ টাকা লাভ করেছি, তবে বারোটি সর্টেক্সের কাজের দায়িত্ব তো আর দুটো সর্টেক্স চালাতে পারেনা !তাই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি। প্রশাসনিক মিটিংয়ে অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওরা শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মুনাফায় দেখছে। অবশেষে আজ ধান চাল ব্যবসায়ী সমিতি, মুটে মজদুর সংগঠন, খোলা দ্বার এবং তার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা মিলে একই বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করে, তারা জানান প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, সুরাহা না মিললে আগামীতে তারা অনশন এবং কর্মবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।