নবান্ন বা বাউনি, শীতকালে এখনো দেখা মেলে ঢেঁকির

মলয় দে , নদীয়া :- প্রায় ছয় ফুট লম্বা কাঠের গুড়ি দিয়ে তৈরি ঢেঁকির অগ্রভাগে মাথার কাছাকাছি দেড় ফুট লম্বা মনাইয়ের মাথায় পরানো থাকে লোহার রিং যা আঞ্চলিক ভাষায় “চুরণ”অর্থাৎ আঘাত করার অংশ। বিপরীত ক্ষেত্রে চুরণ যেখানে বারবার ধাক্কা দেয়, সেই অংশের নাম গর। সেটিও কাঠের তৈরি মাটিতে পোঁতা থাকে। ঢেঁকির একেবারে পেছনে লেজ বিশিষ্ট চ্যাপ্টা অংশে প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা দুই জন মহিলার চাপ দেওয়ার ফলে মনাই ওঠানামার ছান্দিক ভাবে গরের মধ্যে থাকা খাদ্যবস্তুর সঠিক সময় নেড়ে দেওয়া বা অলি দেওয়ার মাধ্যমে, বিভিন্ন খাদ্যশস্যের খোসা ছাড়ানো ভাঙ্গানোর সুবিধা লাভ হয়। কিন্তু ছন্দ পতনে ঘটে বিপত্তি। তালের সমন্বয় রক্ষা করার জন্য কিছু প্রচলিত গান গাওয়া হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রের আবির্ভাবে বর্তমানে বিলুপ্তের পথে ঢেঁকি। তবে দুই প্রস্তর বিশিষ্ট যাঁতা এখানে কাছে ডেকে নিয়ে ছোটো সংস্করণ বলা যেতে পারে। কলাই, মটর, মসুর, ছোলা, আয়রি নানা ধরনের ডাল , গম ধান, তিল তিসি নানা খাদ্যশস্য খোসা ছাড়ানো বা ভাঙতে, এমনকি হলুদ জিরের মতো কিছু মসলার গুঁড়ো সে আমলে সবটাই হতো এই ঢেঁকির সাহায্য। বর্তমানে অবশ্য শুধুমাত্র শীতকাল আসলেই, গ্রাম বাংলার দু একটি পরিবারে, আজও দেখা যায় সেই বিরল দৃশ্য।