মলয় দে নদীয়া:- কবিগুরু বলে গেছিলেন ” যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে” । আর এবার “আমি একা” নামাঙ্কিত ব্যাটারি চালিত একটি গাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে শান্তিপুরের অলিতে গলিতে। কি একটু অবাক লাগছে তো ? বিদেশের রাস্তায় নানান ধরনের গাড়ি দেখে আমরা অভ্যস্ত থাকলেও, এমন এক অভিনব ব্যাপার শান্তিপুরে দেখতে আগ্রহী পথচলতিরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও শোরগোল পড়ে গেছে এই গাড়ি নিয়ে!
গাড়ির স্রষ্টা নদীয়ার শান্তিপুর শহরের বৈষ্ণব পাড়া এলাকার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সঞ্জয় প্রামানিক। অবিবাহিত সঞ্জয়বাবু মা-বাবা দাদা-বৌদি এবং এক ভাইপো কে নিয়ে বাস করেন।নিজের শখ পূরণের জন্য একটি গাড়ি তৈরি করার ইচ্ছে জেগেছিল মনে। সাধ আর সাধ্যের ব্যবধান বেশ খানিকটা থাকলেও, মোটর গ্যারেজ, পুরনো লোহার দোকান থেকে বাতিল জিনিসপত্র কম দামে কিনে বানিয়ে ফেলেছেন চারচাকা। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক গলিয়ে তৈরি করেছেন গাড়ির দেহের আবরণ, বিশেষভাবে সক্ষম দের বাতিল গাড়ির কাঠামো চাসিস হিসেবে ব্যবহার করেছেন, বাতিল হওয়া স্কুটির দুটি চাকা এবং অন্য একটি মোটরসাইকেলের ফেলে দেওয়া চাকা নিয়ে গড়ে তুলেছেন এই গাড়ি। নাইলনের দড়ি লোহার স্টিয়ারিং এর উপর পেচিয়ে নিয়েছেন, পাশাপাশি, জলের পাইপ বেঁকিয়ে দুটি লুকিং গ্লাস, এবং সেলুনের বাতিল হওয়া অত্যন্ত আরামদায়ক একটি সিট দিয়ে তৈরি গাড়ি। শুধুমাত্র চালক আসন বিশিষ্ট এই গাড়ি চালাতে পারবেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই! গাড়িতে ঢোকার একমাত্র দরজা তৈরি করেছেন ভেঙে যাওয়া প্লাস্টিকের ডাইনিং টেবিল থেকে। ভেতরে রয়েছে অসাধারণ ছোট ছোট বিভিন্ন শিল্প কর্মের নিদর্শন দেখা গেলো যেমন, চালকের টুলবক্স, আরাধ্য দেবতার সিংহাসন, লাগেজ রাখার জায়গা আরো কত কি! বর্তমানে মাত্র বারো ঘন্টা চার্জ দিলে গাড়ি চলবে চার ঘন্টা । এমনই ব্যাটারি সম্বলিত এই গাড়ির খরচ পড়েছে মাত্র কুড়ি হাজার টাকা! যার মধ্যে শুধুমাত্র ব্যাটারি এবং চার্জারের দাম প্রায় ১৩০০০ টাকা অর্থাৎ গাড়ির দাম মাত্র ৭ হাজার। সঞ্জয় বাবু যে শুধুমাত্র গাড়ি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তাই নয়, এছাড়াও বকুল ,বট, সহ বিভিন্ন গাছের বনসাই, এবং সংগৃহীত গাছের শিকড় এবং কাঠ দিয়ে তার তৈরি অপরূপ ভাস্কর্যর নিদর্শন দেখে আমরা হতবাক!
যোগাযোগের জন্য তিনদিন ঘোরার পর জানা গেল তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না! সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান “চোখে চোখ রেখে কথা সত্যি হয়। মোবাইলে শুধু অনর্গল মিথ্যা কথা তাই ব্যবহার করতে চাইনা।”
সঞ্জয় বাবুর জন্য আমাদের সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে রইলো গভীরশ্রদ্ধা, তার শিল্প নিদর্শন ছড়িয়ে পড়ুক দিক দিগন্তে! এই কামনাই করি।