অভিমানী ব্রাহ্মণরা নিজেরাই গড়লেন পৌরোহিত্য শিক্ষা গ্রহণ কেন্দ্র

মলয় দে, নদীয়া : সম্মানের প্রণামীর বদলে, পুরোহিত ভাতা! এ কেমন কথা ? তাই এবার সম্মান মর্যাদা স্থাপনের অন্য প্রয়াস। অভিমানী ব্রাহ্মণরা নিজেরাই গড়লেন পৌরোহিত্য শিক্ষা গ্রহণ এবং পঠন-পাঠন কেন্দ্র।
বেদান্ত চর্চা , সংস্কৃত পঠন পাঠন , পৌরহিত্য প্রশিক্ষণ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের জোর কদমে পঠন পাঠন প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে নদিয়ার শান্তিপুরে । বুধবার বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ শান্তিপুরের বিধায়ক তথা অখিল ভারত বর্ষীয় ব্রাহ্মণ মহাসভার পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে উক্ত প্রক্রিয়ার শুভ উদ্বোধন হলো । এই ধরনের ধর্মীয় গঠনমূলক শিক্ষা পুনরায় বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু মূল্যবান বই এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করলেন শান্তিপুর বঙ্গীয় পুরান পরিষদ চতুষ্পাঠীর উদ্যোগীদের।
এক সময় শান্তিপুর বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ বালক সমাজ নামে পরিচিত ছিল । ধর্ম ও নীতি শিক্ষার মাধ্যমে বালকদের চরিত্র গঠনই ছিল এই বালক সমাজের মূল লক্ষ্য । পুরাণ বিষয়ক চর্চা ও যোগ্যতা মূলক পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই অল্প কয়েক্ দিনের মধ্যেই এই বালক সমাজ সাহিত্য ও ধর্ম চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়ে ছিল । 1915 সালে মহারাজ মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী বালক সমাজকে বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদে রূপান্তরিত করতে সহায়ক ভুমিকা নিয়েছিলেন । পরিষদের পঠন পাঠনের মোট তিনটি স্তর রয়েছে আদি , মধ্য ও উপাধি । প্রতি ছয় মাস অন্তর পরীক্ষার রীতি রয়েছে । জ্যোতিষ পুরাণ সম্পর্কিত বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য পুঁথি এখানে রয়েছে ।
তবে নতুন ভাবে পুরাণ পরিষদের পঠন পাঠন সংক্রান্ত কার্যাবলী শুরু হবার আনন্দে নতুন করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন পুরোহিত সম্প্রদায়। বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য্য বলেন, ইমাম হোক বা পুরোহিত তাদের “ভাতা” নয়! সম্মানের প্রণামী নিবেদন ভারতীয় সংস্কৃতি।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট এর নদীয়া জেলার সভাপতি প্রিয়ব্রত ভট্টাচার্য জানান, 1970 সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাকরণ, স্মৃতিতীর্থ, জ্যোতিষ শিক্ষা, পৌরোহিত্য শিক্ষার পরীক্ষার সরকারি ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন, তখন থেকেই হিন্দু ধর্মের এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিজের ধর্মের সাথে দূরত্ব বাড়ে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বহাল রেখে ব্রাত্য রেখেছে গৌরবময় হিন্দু সনাতনী সংস্কৃতিকে।
নদীয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সনাতনী বা কুলীনব্রাহ্মণকূল এ প্রজন্ম পঞ্চাশোর্ধ প্রায় সকলেই এ শিক্ষাব্যবস্থায় অংশ নিতে চায়! তারা অনুধাবন করেছেন, রুজি-রুটির কারণে গতানুগতিক প্রচলিত প্রয়োজনীয় মন্ত্র উচ্চারণ ছাড়া , অনেক কিছুই শেখা হয়নি আধ্যাত্মিক জগতের! তাদের মতে অতীতেও এই নদীয়াই, ধর্মীয় পথ দেখিয়েছে সারা বিশ্বকে। নবদ্বীপ কৃষ্ণনগর শান্তিপুর রানাঘাট সহ নদীয়া মাটিতে সকলের উদ্যোমে গড়া এ ধরনের শিক্ষণ কেন্দ্র আগামী দিন পশ্চিমবঙ্গ সহ সমস্ত ব্রাহ্মণ কুলকে উপকৃত করবে। অন্যদিকে আড়ম্বরতা ভুলে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হবে বিভিন্ন পূজা পার্বণের।