শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ রুখতে নীজের একরত্তি কন্যাকে লক্ষী রূপে আরাধনা করলেন কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া নাঘাটার শিক্ষক দম্পতি
চারিদিকে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ ,খুন যেভাবে হচ্ছে তাতে আতঙ্কিত প্রতিটি পরিবার । একদিকে আর জি করের অভয়ার নৃশংস খুন অন্যদিকে, কুলতলীর উমাকে ধর্ষণ করে খুন নতুন সংযোজন গতবছর লক্ষ্মীপুজোর দিন নদীয়ার কৃষ্ণনগরে তরুণীকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন ও পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সমাজের প্রতিটি মানুষকে ব্যথিত করেছে । এই ঘটনা,রোধ করতে নীজের ছয় বছরের কন্যাকে লক্ষী রূপে পূজা করে অভিনব উপায়ে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানালেন নদিয়ার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাজদিয়ার নাঘাটায় ভাজনঘাট হাই স্কুলের শিক্ষক অর্জুন বাগচী । কোজাগুড়ি লক্ষ্মী পূর্ণিমার পুণ্য তিথিতে সারা বিশ্ব যখন ধন-সম্পদ লাভের আশায় লক্ষ্মী মাতার আরাধনায় ব্রতী হয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের ছয় বছর বয়সী এক রত্তি শিশু কন্যাকে লক্ষ্মী মাতার আদলে সজ্জিত করে ধর্মীয় রীতি মেনে তাঁকে পুরোহিত ডেকে পূজা করে পৃথিবী থেকে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের মতো অসামাজিক ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য মা লক্ষ্মীর কাছে কাছে প্রার্থনা জানালেন শিক্ষক দম্পতি । একরত্তি কন্যাকে চেয়ারে বসিয়ে লক্ষ্মী আরাধনায় মাতলেন বাগচী পরিবার।ছয় বছরের অরিত্রিকা কে লক্ষ্মীর আদলে সজ্জিত করে পুরোহিত ডেকে শিশু কন্যাকে মাতৃরূপে পূজা করলেন বাগচী পরিবারের সদস্যরা। এই প্রসঙ্গে কন্যা শিশুর মা ঝুমা বাগচী বলেন, মেয়ে সন্তানকে প্রতিটি পরিবারেই লক্ষ্মী হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও নারীকে মাতৃ শক্তির আধার রূপে মানা হয় । মূলত সেই কারণেই মা লক্ষ্মীর মৃন্ময়ী মূর্তির বদলে ঘরের মেয়েকেই তাঁরা লক্ষ্মী মাতার রূপে আরাধনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুণ বাগচী বলেন নিজেদের মেয়েকে ভগবান রুপে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে সমাজ থেকে শিশু নির্যাতন ও নারী নির্যাতনের মত অমানবিক ঘটনা চিরতরের জন্য বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। মেয়ের জন্মের পর থেকে পরিবারের অনেক উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত গ্রাম বাংলার বহু জায়গায় বাস্তব জীবনে মেয়েদের পিছন সারিতে ফেলে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় কিছু সংখ্যক মানুষজনদের মধ্যে। কন্যা সন্তানদের প্রতি তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা ও অসামাজিক মনোভাবকে মুছে দিতেই নিজের এক রত্তি কন্যা সন্তানকে মাতৃরূপে আরাধনা করার মধ্যে দিয়ে নারীদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি বলেন শিশু কন্যা সমাজে অবহেলিত নয় । ছেলে মেয়ে সন্তানের মধ্যে কোন বিভেদ করা ঠিক নয় । আর পাঁচটা পরিবারের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার পালনের মতোই এই দিন নিজের মেয়ে কে মা লক্ষী রূপে সাজিয়ে পুরোহিত ডেকে মা লক্ষীর আরাধনা করতে দেখা গেল কৃষ্ণগঞ্জের শিক্ষক দম্পতিকে । এলাকার বিশিষ্ট পুরোহিত বাবন ভট্টাচার্য বলেন মেয়েরা মায়ের সমান । মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করাটা বিধিসম্মত । তিনি জোড়ের সঙ্গে বলেন সমাজ থেকে শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে প্রত্যেক পরিবারের উচিত মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পূজা করা । কারণ এই মেয়ে একদিন বড় হয়ে অন্য ঘরে যাবে । পুরোহিতের দৃঢ় বিশ্বাস মেয়েকে যদি লক্ষীরূপে রাখা যায় পরের ঘরে গিয়েও সে সংসারকে আলোকিত করবে । দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে কুমারী পূজার প্রচলন থাকলেও কোন শিশু কন্যাকে লক্ষ্মী রূপে আরাধনা করার ঘটনা এখনো পর্যন্ত নজিরবিহীন। শিক্ষক অর্জুন বাগচী বলেন আজ নিজের কন্যাকে লক্ষী রূপে পূজা করে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম যাতে যে সমস্ত শিক্ষক থেকে বঞ্চিত হয়ে আন্দোলন করছেন ধর্নায় বসেছেন অন্যদিকে যে সমস্ত শিক্ষকরা যোগ্য হওয়া সত্বেও অযোগ্য শিক্ষকদের জন্য চাকরি হারা হয়েছেন তারা যাতে চাকরি ফিরে পায় সেই প্রার্থনায় করলাম । মা লক্ষ্মীর কৃপায় তারা চাকরি ফিরে পেয়ে তাদের ঘরের মেয়েকে, সন্তানদেরকে নিয়ে পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হোক তাদের ঘরে আনন্দ ফিরে আসুক যোগ্যদের জন্য সেই প্রার্থনাই করেছি । বাহ্যিক পরিবারের অরিত্রার ঠাকুরমা পারুল বাগঝি বলেন আমাদের অতিথি সত্যি লক্ষী । তার মত লক্ষী মেয়েকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করতে পেরে আমরা পেরে গর্বিত । শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে একরতি লক্ষ্মীর পুজো ও কর্মকাণ্ডকে স্বচক্ষে দেখতে বাগচী পরিবারে ভিড় জমান আশেপাশের প্রতিবেশীরা। সবাই এহেনো কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ।





