নদিয়া জেলার সুপ্রাচীন মন্দির গুলির মধ্যে শান্তিপুর মতীগঞ্জ মোড় নিকটস্থ জলেস্বর শিব মন্দির বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । শিব রাত্রি উপলক্ষ্যে দুপুর থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে পুজোপকরণ সহ এখানে মানুষের ঢল প্রতক্ষ্য করা গেছে ।
এই প্রকার মন্দির কে এককথায় চার চালা মন্দির বলা হয় । যদিও নদীয়ার দিগ নগরের রাঘোবেস্বরের মন্দিরের মতন এই মন্দিরটির গঠন প্রকৃতি হলেও জলেশ্বর মন্দিরের উচ্চতা বেশি । জলেস্বর মন্দির ঠিক কোন সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় নি । তবে 1632 থেকে 1683 সালের মধ্যবর্তী সময়ে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ধারণা করা হয় । ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মতানুযায়ী 1632 থেকে 1683 সাল পর্যন্ত নদিয়ার রাজা রাঘব রায়ের রাজত্বকাল , আর ঠিক এই সময়ের মধ্যেই জলেশ্বর মন্দির নির্মিত হয়েছিল বলা ধারণা করেন ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের একটি অংশ । তবে গবেষকদের অন্য আরেকটি অংশের মতে রাজা রুদ্রের কনিষ্ঠ পুত্রের আমলে আঠারো শতকের প্রথম দিকে এই মন্দির নির্মাণ করেন ।
কথিত আছে একবার অনাবৃষ্টির কারণে শান্তিপুরের চাষীদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছিল । সেই সময় শান্তিপুরের সাধক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী পর্যাপ্ত পরিমাণে গঙ্গার জল ঢেলেছিলেন এই শিব লিঙ্গের মস্তকে , তার পরেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবার কারণে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়ে উঠেছিল । আর সেই সময় থেকেই এই শিব লিঙ্গের নামকরণ করা হয় জলেশ্বর । শিব লিঙ্গটি কালো কষ্টি পাথরের , দৈনিক পূজিত জলেস্বর শিবের উচ্চতা 3 থেকে সাড়ে তিন ফুট ।
জলেস্বর মন্দিরের সমগ্র দেওয়ালগুলিতে প্রতক্ষ্য করা যায় পোড়া মাটির শিল্পের বিভিন্ন নক্সা বা যাকে এক কথায় বলা হয় টেরাকোটা শিল্প । দেখা যায় রামায়ণ মহাভারতের ওপর শিল্প কর্ম, গণেশ , কালী , ভীষ্মের শরো শয্যা , তীরন্দাজ ও ব্যাধ এবং বন্দুকধারীর জীবন যাত্রার ওপর বিভিন্ন শিল্পকর্ম । তবে তীরন্দাজ এর ওপর শিল্প কর্ম দেখে অনুমান করা যায় মন্দিরটি নির্মাণ কালে তত্কালীন জীবন যাত্রায় তির ধনুকের ব্যাবহার যথেষ্ট ছিল এবং এটাই ছিল প্রধান যুদ্ধাস্ত্র ।
শান্তিপুর শহরের পৌর কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট স্বর্গীয় কালী চরণ চট্টোপাধ্যায় এই মন্দির সংস্কার করেছিলেন এবং তারই পূর্ব পুরুষগণ এই মন্দিরের সেবা ইত ছিলেন বলেই বিশেষ সুত্রে জানা যায় ।
সেই উপলক্ষে, বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য প্রতি বছরই এই মন্দিরে পুজো দিয়ে থাকেন , এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না। ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান পূজারীরবেশে রাত দশটায় বসেন যজ্ঞে, সাথে আরো পাঁচজন পূজারী। মন্দিরের দায়িত্বে থাকা বিমান কুমার বসু জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায়, করোনার কারণে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে জল ঢালার বিশেষ ব্যবস্থা ছিলো।