সংক্রামিত রোগীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় নদিয়ার আগের সেফ হোমগুলিকে আবার নতুন করে চালু করার নির্দেশ এলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র একটি বাদে বাকিগুলো চালু করা হয়নি।এমনকি কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে 100 বেডের কোভিড হাসপাতাল চালু করার কাজ শুরু হলেও সেটিও চালু করা সম্ভব হয়নি।সম্ভবত দু-একদিনের মধ্যে চালু হয়ে যেতে পারে ।ফলে সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকলেও তাদের বেশিরভাগকেই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।জেলায় এখনও পর্যন্ত চালু রয়েছে মাত্র একটি কোভিড হাসপাতাল।যদিও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কল্যানীর নেতাজি সুভাষ স্যানেটোরিয়াম কোভিড হাসপাতালে 140জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।বাড়িতে চিকিৎসা চলছে 1845 জনের। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত 265 জন রোগী নতুন করে বাড়িতে চিকিৎসাধীন হয়েছেন।কেন তড়িঘড়ি নতুন কোভিড হাসপাতাল এবং সেফহোমগুলি চালু করা হচ্ছে না, ইতিমধ্যেই তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।যদিও এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন,’ খুব শীঘ্রই কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে 100বেডের একটি কোভিড হাসপাতাল চালু করা হচ্ছে।চালু করা হবে কয়েকটি সেফহোমও।’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার প্রথম ধাপে গোটা জেলা জুড়ে মোট 10টি সেফ হোম করা হয়েছিল।তারমধ্যে 50 টি বেডের করিমপুর এক নম্বর ব্লকের কর্মতীর্থ সেফ হোম, 90টি বেডের ধুবুলিয়া বাহাদুরপুর সেফ হোম, 80টি বেডের হরিণঘাটা আই টি আই কলেজ সেফ হোম, 30 টি বেডের রানাঘাটের সেফ হোম, 50 টি বেডের চাপড়া বেলতলা আইটিআই সেফ হোম, 30 টি বেডের হাঁসখালি কিষানমান্ডি সেফ হোম,30 টি বেডের পলাশীপাড়া সেফহোম, ৪০ টি বেডের কালিগঞ্জ কর্মতীর্থ সেফহোম, 100 টি বেডের রুইপুকুর সেফহোম এবং 50 টি বেডের বাবাসাহেব আম্বেদকর পলিটেকনিক কলেজ সেফ হোম ছিল।অর্থাৎ 10টি সেফহোমে 550বেড চালু ছিল।করোনা পরিস্থিতি যখন মাঝে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল, তখন এই সেফহোমগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।এছাড়া, কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল ও কল্যানীর এস এন আর কার্নিভালকে যে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেগুলোও ছেড়ে দেওয়া হয়।তখন কল্যাণীর নেতাজি সুভাষ স্যানেটোরিয়ামকে কোভিড হাসপাতালে রুপান্তরিত করা হয়।কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় কৃষ্ণনগরের জেলা হাসপাতালে পরিকাঠামো তৈরি করে আরও একটি কোভিড হাসপাতাল তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এসে দাঁড়ায়।সেইমত জেলা হাসপাতালে 100বেডের কোভিড হাসপাতাল তৈরি করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলছে।জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,তবে সেফহোমগুলি আগের মত ব্যবহার করা হবে না।করোনার প্রথম ধাপে মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে লোক থাকা সত্ত্বেও অনেকে সেফ হোমে চলে এসেছিলেন।কিন্তু এবার যাদের উপসর্গ উদ্বেগজনক নয় এবং যাদের বাড়িতে রয়েছে দেখাশোনার লোক, তাদের সেফ হোমে রাখা হবে না।মূলত যাদের উপসর্গ বেশি রয়েছে এবং বাড়িতে নেই দেখাশোনার লোক,তারাই সেফ হোমে থাকার যোগ্য।আপাতত ঠিক রয়েছে,22 তারিখ ষষ্ঠ দফার ভোট মিটে গেলে সেফ হোমগুলির পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে তা চালু করা হবে।তবে প্রথম দিকে যে জোনে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হচ্ছে,সেই জনেই প্রথম চালু হবে সেফ হোম।উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়ে বুধবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 403 জন।তার মধ্যে কৃষ্ণনগর পুরএলাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা 22 জন, চাকদহ পুর এলাকায় 22 জন, রানাঘাট পুরএলাকায় 56 জন, কল্যাণী পুরএলাকায় 41 জন।আক্রান্তরা রয়েছেন অন্যান্য পুরএলাকাতেও।এছাড়া, জেলার ব্লকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কৃষ্ণনগর দু’নম্বর ব্লকে ও নাকাশিপাড়া ব্লকে 29 জন করে , রানাঘাট দু’নম্বর ব্লকে 27 জন।আক্রান্ত হয়েছেন অন্য ব্লকেও। বুধবার সকাল পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে 4 জনের মৃত্যু হয়েছে।ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল 368 জন। মোট আক্রান্ত 21107 জন।স্বভাবতই, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যেই ভ্যাকসিন নেওয়ার চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিন কৃষ্ণনগর সদর সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে এসে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন প্রচুর মানুষ।ভ্যাকসিন নিতে আসছেন ভোটের ডিউটিতে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভোট কর্মী হিসাবে জরুরিকালীন ভিত্তিতে তাদের দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন।কেউ নিচ্ছেন প্রথম ডোজ, কেউবা নিচ্ছেন দ্বিতীয় ডোজ।জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,জেলায় নতুন করে 25 হাজার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন এসেছে।ইতিমধ্যেই প্রায় 8 হাজার দেওয়া হয়ে গিয়েছে।বাকি যা রয়েছে, তা দিয়ে 22 শেএপ্রিল ভোটের দিনের পরে আর মাত্র দু-তিনদিন চালানো সম্ভব।তারপরে নতুন ভ্যাকসিন না আসলে সমস্যা তৈরি হবে। যদিও নতুন করে আর কো-ভ্যাকসিন আসেনি।আর তাই, এই মুহূর্তে কো-ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ।হাতে যা স্টক রয়েছে, তা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব হবে।ফলে জেলা স্বাস্থ্যদফতরকে খুব ভেবেচিন্তে ভ্যাকসিন দিতে হচ্ছে।প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য লাইন দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না। ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।ভ্যাকসিন দেওয়ার লাইনে প্রতিদিনই হচ্ছে গন্ডগোল।হচ্ছে ধাক্কাধাক্কিও।জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে আরও বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।