মলয় দে নদীয়া:- তরজা মূলত আরবি শব্দ তরজিবন্দ (কবিতার চরণ যা ঘুরে ঘুরে আসে) শব্দ থেকে উৎপত্তি বলেই জানা যায়। দেবস্তুতি, সরস্বতী বন্দনা আসর বা সভাগৃহ বন্দনা, চাপান (প্রশ্ন পর্ব)এবং উত্তর (উত্তর পর্ব) এভাবেই বিভিন্ন ধর্মীয় পৌরাণিক কাহিনী, সমজিক ত্রুটি-বিচ্যুতি, সাংসারিক সমস্যা ও সমাধানের বিভিন্ন দিক হেঁয়ালি প্রহেলিকা ধর্মী ছড়াগানের মাধ্যমে দুই গায়েন তাদের সহকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সমাহারে পরিবেশনের নাম তরজা গান।
“নদে শান্তিপুর হইতে খেঁড়ু আনাইবো! নতুন নতুন ঠোঁটে খেঁড়ুশোনাইবো” মহারাজ নবকৃষ্ণদেব বাহাদুর ছিলেন এই খেঁড়ু বা খেঁউড় গানের, প্রধান পৃষ্ঠপোষক। উনবিংশ শতকের শুরুতে খেউর গান ওস্তাদি ঢঙে মার্জিত হয়ে রামনিধি গুপ্ত এর হাতে আখড়াইয়ে সমৃদ্ধ হয়। হিন্দি টপ্পা গান ভেঙে রাগ রাগিনী প্রাধান্য সুরের মূর্ছনায় এই গান নবরুপ পায়। প্রণয়ঘটিত বিষয় উপস্থাপিত হওয়ার প্রাধান্যতে সখি সংবাদ এবং খেউর এই দুটি মূল অংশ থাকতো। অতিরিক্ত মনোরঞ্জনের নিরিখে সস্তা জনপ্রিয় করে তুলতে শব্দের শালীনতা কাব্যগুণ হারাচ্ছিলো ক্রমেই। এ প্রসঙ্গে সুকুমার সেন লিখেছিলেন “মুসলমান সম্রাট এবং নবাবদের দরবারে এই আরম্ভর শিক্ষিত সমাজকে ক্রমেই বিষাক্ত করে তুলেছিল শিক্ষিত শ্রেণীর বিকৃত রুচির পরিচয় মিলেছে।”
সেদিনের গণেশ ভট্টাচার্য শিশির সরকার নীলরতন পাল বিজয় সরকার অসীম সরকারের মতো কবিয়াল, তরজা শিল্পী, মনসামঙ্গল গায়ক, ঝাপান শিল্পীরা আজ লুপ্তপ্রায়। প্রত্যন্ত গ্রামবাংলায় আজ বাউলের দেখা মিললেও তরজা হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য- ইতিহাস। বর্তমান প্রজন্ম অনেকেই হয়তো এনাদের নামই শোনেনি।