বাবার মৃত্যু হয়েছিলো পথ দুর্ঘটনায় বাইক এক্সিডেন্টে, পরিবারের কাছে মোটরসাইকেল আতঙ্ক একমাত্র ছেলে কলা বিভাগে র ছাত্র হয়েও বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে মাত্র কুড়ি হাজার টাকায় বানিয়ে ফেললো অত্যাধুনিক মোটরবাইক!
মলয় দে নদীয়া:-
বিজ্ঞানের অপব্যবহারে ফল খারাপ হলেও সঠিক ব্যবহারে উপকৃত হয় হাজার হাজার মানুষ ।তার জ্বলন্ত উদাহরণ নদীয়ার শান্তিপুরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের দালালপাড়া কালিদাস বিশ্বাস লেনের সাগ্নিক প্রামানিক। শান্তিপুর সূত্রাগড় এমএন উচ্চ বিদ্যালয়ে কলা বিভাগ নিয়ে বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছে সে। তবে কলা বিভাগে পড়েও বিভিন্ন পরিত্যক্ত এবং পুরনো জিনিসপত্র দিয়ে বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী অত্যাধুনিক স্টাইলিশ মোটরবাইক করে ফেলল সে যার খরচ মাত্র কুড়ি হাজার টাকা। যা অনেক ইঞ্জিনিয়ার কেউ হার মানাবে। একটি ২০০ সিসির পাম্পের ইঞ্জিন দিয়ে বানিয়ে ফেলল সে আস্ত একটি মোটর সাইকেল। তবে এখানেই শেষ নয়, ইঞ্জিনটি এমন ভাবে তৈরি করা, যাতে পেট্রোল, ইথানল, সিএনজি এবং ভবিষ্যতে ব্যাটারি দিয়েও মোটর সাইকেলটি চালানো সম্ভব হবে।
জানা যায় 2024 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই মোটরসাইকেলটি তৈরি করতে শুরু করে সে। মোটরসাইকেলে রয়েছে আরও এক অত্যাধুনিক ফিচারস। তৈরি করা হয়েছে এমন একটি হেলমেট যাতে লাগানো রয়েছে একাধিক সেন্সর। সেই হেলমেট বাইক আরোহী সঠিকভাবে পরিধান না করলে মোটর সাইকেল চালানো যাবেনা। তবে কেন এই পদ্ধতি অবলম্বন করল সাগ্নিক, তার পেছনে রয়েছে করুন এক ইতিহাস।
আজ থেকে চার বছর আগে একটি পথ দুর্ঘটনায় সাগ্নিকের বাবা গোবিন্দ প্রামানিক মারা যান। স্কুটি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় লরির সঙ্গে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। এরপর থেকেই দুই চাকা বাহনের প্রতি আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছিল গোটা পরিবারের মধ্যে। এর পরেই সাগ্নিক মনস্থির করে আর কারোর প্রাণ যেতে দেবে না সে, একটি সাইকেল বানানো যে চালাতে গেলে হেলমেট অত্যাবশ্যক।
সাগ্নিক জানায়, সচেতনতা র প্রচার যথেষ্ট থাকলেও হেলমেটের সাথে গাড়ির গতি বাধ্যতামূলক থাকলে তবেই সাধারণ মানুষ তা মেনে চলবে আর তাই বিশেষ ধরনের সেন্সর লাগানো হয়েছে । সাইকেলের ভাঙ্গা অংশ জলের ট্যাংকের কিছু অংশ কলের পাইপ এ ধরনের বাড়ির পরিত্যক্ত নিজেই ওয়েল্ডিং করে জুড়েছে, তাই শুধু চালকের আসন আগামীতে আরোহীর জায়গাও করা হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে তার ইচ্ছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জৈবশক্তি যা বর্তমানে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয় সেগুলি দিয়ে কিভাবে কম খরচে মানুষের সাধ্যের মধ্যে যানবাহন বানানো যায়।
তবে ছোটবেলা থেকে এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকলেও কেন কলা বিভাগ নিয়ে সে ভর্তি হল জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, এই বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও কলা বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করার ইচ্ছা। তবে ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়েই চর্চা করার ইচ্ছে রয়েছে তার। এছাড়াও সে জানায় মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বেল করার সময় যেই সমস্ত ইনফরমেশন গুলি দরকার হয় তা কিছুটা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া এবং কিছুটা নেওয়া হয়েছে স্থানীয় গ্যারাজ থেকে তবে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকগণ তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে । উৎসাহ যুগিয়েছে পাড়া প্রতিবেশী থেকে আত্মীয় পরিজন সকলে।
একমাস আগেই গাড়িটি তৈরি হয়ে গিয়েছিল শুধুমাত্র আজকের স্কুলে সাইন্স এক্সিবিশনে প্রকাশ করার জন্যই এই এক মাস প্রচার করেনি সে ।
সাগ্নিকের মা শর্মিলা প্রামানিক একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে কর্মরতা। তিনি জানান, চার বছর আগে সাগ্নিকের বাবা মারা যাওয়ার পর যানবাহন মানেই আমাদের বাড়িতে একটি আতঙ্ক। সেখান থেকে সাগ্নিক যখন আমাদেরকে বলে তখন আমরাও বিষয়টার গুরুত্ব বুঝে ওকে উৎসাহ দি। আমি চাই ভবিষ্যতে যেন ও আরও নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে এবং কিভাবে এগোতে হবে সেই সঠিক পথটি যেন সমাজের সকল স্তরের মানুষেরা ওকে সঠিক ধারণা দেয়।
বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অমরেন্দ ইন্দ্র, টিআইসি পলাশ সাধুখা জানান, প্রবল আগ্রহ কখনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না কলা বিভাগ থেকেও এ ধরনের বহু প্রতিভা উঠে আসে বিজ্ঞান মেলায় এমনকি পড়াশোনায় যাদের মেধা তুলনামূলকভাবে একটু কম তারাও সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকে বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলায় নিজেদের প্রতিভা প্রকাশের জন্য। দশম শ্রেণীর ছাত্ররা মহিলাদের এক বিশেষ জুতো বানিয়েছে যেখানে তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে জিপিআরএস লোকেশন ট্রাকিং এবং এবং শত্রুকে ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে ঘায়েল করার।