ভারতের স্বাধীনতার আগের শুরু হওয়া শান্তিপুরের বোম্বেট কালীপুজোর কনিষ্ঠ সদস্য আজ ৯৩ বছরের বৃদ্ধ ! শোনালেন পুজোর কথা

ভারতের স্বাধীনতার আগের শুরু হওয়া শান্তিপুরের বোম্বেট কালীপুজোর কনিষ্ঠ সদস্য আজ ৯৩ বছরের বৃদ্ধ ! শোনালেন পুজোর কথা

মলয় দে নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুরে বৈষ্ণবীয় প্রভাব বেশি থাকলেও শাক্ত উপাসনাও কম নয় ! রয়েছে বহু প্রাচীনকালে শক্তির উপাসনার নানান নিদর্শন। তবে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী কিংবা সেই সময়ে ডাকাত কালী পুজোর প্রচলন দেখা যায় শান্তিপুরে এবং সেক্ষেত্রে বর্তমান পরিচিত বোম্বেট কালী অন্যতম। সে সময়ে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বর্তমানে 93 বছর বয়সে বৃদ্ধ। যদিও উদ্যোক্তারা সকলেই প্রয়াত হয়েছেন কিন্তু তার চোখে আজও ভেসে ওঠে পুজোর নানান কথা।
ভারত স্বাধীন হওয়ার দু এক বছর আগে নদীয়ার শান্তিপুরে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাস ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিলো। মূলত শক্তির আরাধনা প্রার্থনা এবং শান্তিপুরের মানুষকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য নিয়ে তখনকার যুব সমাজকে নিয়ে তৈরী হয় বোম্বেট মিলিটারি নামে একটি সংগঠন। কাশ্যপ পাড়ার বাসিন্দা বিষ্টু ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শান্তিপুরের বাছাই করা ডাকাবুকো ছেলেদের নিয়ে তৈরী হয় এই সংগঠন। বিষ্টু ভটচাজ্ ছাড়াও দলের প্রথম সারিতে ছিলেন সুশীল পাল, পবিত্র চ্যাটার্জী, শ্যাম সুন্দর মুখার্জী, বিমল চ্যাটার্জী, মোহনদাস রায়, ফুনু সান্যালদের মত মানুষরা । এই দলের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন কাশ্যপ পাড়ার সুচিত বাগচি যিনি এখন ৯৩ বয়সী বৃদ্ধ। তিনি শোনালেন এই পুজোর নানান কথা। তিনি তখন ক্লাস এইটে পড়েন , পাড়ার জ্যাঠা কাকা দাদাদের সাথে পুজোর নানান রকম কাজকর্ম করতেন। এই কালি মা তার বাম পা টি ভোলানাথ শিবের বুকের উপরে রেখেছিলেন তাই এই কালি মা বামা কালী হিসেবেও পরিচিত কারণ সে সময় শান্তিপুরের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দক্ষিণা কালী পুজোর প্রচলন ছিলো। অন্যান্য সমস্ত কালী পূজার শোভাযাত্রার সময় এই বোম্বের কালি মায়ের কাছে এসে ডালি নিতেন যদিও সেই রীতি চালু ছিল পরবর্তীতে বহু বছর এমনকি শুধুমাত্র মশালের আলোতেই মায়ের নিরঞ্জন সম্পন্ন হতো কিছু বছর আগেও। তবে সমগ্র সভাযাত্রা নয় ডাকঘর মোর পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসার রেওয়াজ সে সময় অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরবর্তী বছরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অপর এক গোষ্ঠীর সাথে ভয়ানক গন্ডগোল হয় ডাকঘর মোড় এলাকায়। এবং সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের অনেকেই ধরে নিয়ে যায় এক বছরের জন্য পুজো বন্ধ থাকে । কিন্তু সুচিত বাবু সেদিনও হার মানেননি প্রশাসনের কাছে। বোম্বেট কালীর সুনির্দিষ্ট জায়গায় পূজো না করতে পারলেও কাশ্যপ পাড়ায় বাংলা স্কুলের সামনে পাড়ার সকলকে নিয়ে শুরু করলেন কালীপুজো যা, বাংলা কালি নামে পরিচিত। যদিও পরবর্তীতে দুটি পুজোই চলতে থাকে একই সাথে যা আজও শান্তিপুরের কালীপুজোর ইতিহাসের অন্যতম কাহিনী। তবে বয়সে বৃদ্ধ হলেও সুচিত বাবু র স্মৃতি এতটুকু মলিন হয়নি করোনা এবং তার পরবর্তী সময়ে কয়েক বছর তিনি ঠাকুর দেখতে যেতে না পারলেও পরিবার এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গত বছর থেকে তিনি একবার করে দুই মায়ের কাছেই যান প্রণাম করতে।