বাঙালি মেয়ের বিয়ের রীতিতে পূজিতা হন শান্তিপুরের প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন জাগ্রত মহিশখাগী কালীমাতা, দেবী পাটে ওঠার পর হয় দধিমঙ্গল, চ্যাটার্জি বাড়ির পুজো হলেও বর্তমানে তা পাড়ার দায়িত্বে তবে পরিবারের মেয়েরা উপস্থিত হন প্রতিবছর

বাঙালি মেয়ের বিয়ের রীতিতে পূজিতা হন শান্তিপুরের প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন জাগ্রত মহিশখাগী কালীমাতা, দেবী পাটে ওঠার পর হয় দধিমঙ্গল, চ্যাটার্জি বাড়ির পুজো হলেও বর্তমানে তা পাড়ার দায়িত্বে তবে পরিবারের মেয়েরা উপস্থিত হন প্রতিবছর

মলয় দে নদীয়া:-
নদীয়ার শান্তিপুর শহরের প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো মহিশখাগী কালীমাতার পুজো আগে চ্যাটার্জী বাড়ির পরিচালনায় হলেও বিগত কর্মসূত্রে দূরে থাকার কারণে তারা বিগত ১৩ বছর আগে পূজোর দায়িত্বভার তুলে দিয়েছিলেন পাড়ার বারোয়ারির হাতে । তবে কলকাতা হোক কিংবা আমেরিকা থেকে পরিবারের মেয়েরা আজও উপস্থিত হন শান্তিপুরে। পারিবারিক ভাবে দায়িত্বে থাকা কলকাতা নিবাসী শিপ্রা মুখার্জি এবং তার মেয়ে আমেরিকা নিবাসী পম্পা ভট্টাচার্য এবারেও এসেছেন মায়ের পুজোয়। বারোয়ারি সম্পাদক কৃষ্ণ সেন সকলকে সাথে নিয়ে এবারেও মহাসাড়ম্বরে এই পুজো র আয়োজন করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন প্রায় ৪০০ কেজি ভোগ প্রসাদ রন্ধন হয়ে থাকে যা ভক্তদের বিতরণ করা হয় মাটির সরা এবং হাড়িতে। সমগ্র শান্তিপুরের বিভিন্ন প্রান্তের এমনকি ভিন জেলা রাজ্য থেকেও শান্তিপুরের সাথে সম্পর্কিত মানুষজন এই উপলক্ষে এসে থাকেন পেয়ে থাকেন প্রসাদ।
শোনা যায় চ্যাটার্জী বংশের এই পুজোর মন্দির নির্মাণ করেন স্বয়ং মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। তবে বর্তমানে স্থানীয় বারোয়ারির তত্ত্বাবধানেই হয়ে আসছে এই জাগ্রত কালী মায়ের পুজো। প্রথমদিকে মন্দিরটা ছিল একটি কুঁড়েঘরের আদলে। পূজোটি আগে ছিল চ্যাটার্জি বংশের। পরে তারা গত হলে বারোয়ারির হাতে দিয়ে যান পুজোর দায়িত্বভার। পরে মায়ের মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ হয় এলাকাবাসীর তৎপরতায় ।শোনা যায় বাঙালি বিয়ের রীতি অনুযায়ী পুজো করা হয় মহিশখাগী কালী মাকে। মাকে প্রথম পাটে ওঠানোর দিনে থাকে বিভিন্ন নিয়মরীতি। পাটে ওঠানোর পরে মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সেদিন ভোররাতে হয় দধিমঙ্গল। তারপরে অমাবস্যা শুরু হলে বিয়ের রীতি মেনেই পুজো করা হয় মাকে। পরের দিন পালন করা হয় বাসী বিয়ের রীতি। বাসী বিয়ের রীতি অনুযায়ী পূজিত হন মা। পুজো সম্পন্ন হওয়ার পর কাঁধে করে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ নিয়ে যায় মা কে নিরঞ্জনের জন্যে। যা শান্তিপুরের অন্যতম আবেগ।
পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে জানা যায় বহু বছর আগে এই পুজোয় উৎসর্গ করা হতো মহিষ,পরবর্তীতে পাঠা বলি। তবে অনেক বছর আগে একবার পূজার্চনা করতে দেরি হয়ে যাওয়াতে বলি উৎসর্গের সময় পেরিয়ে যায়। সেই দিন থেকেই মহিশখাগী কালী মায়ের পুজোতে কোনরকম বলি উৎসর্গ করা হয় না। সেই থেকেই বন্ধ হয়ে যায় মহিশখাগী মাতার পুজোতে বলি প্রথা। তবে নিরঞ্জনের আগে মাতা মহেশখীকে দেয়া হয় পান্তা ভাত, খয়রা মাছ এবং রুইমাছের ভোগ দেওয়া হয়। যদিও এই পুজোকে কেন্দ্র করে সারা শান্তিপুরবাসী মেতে ওঠেন দীপাবলির আনন্দে।