পাঠক শূন্য পাঠাগার হলেও নদীয়ার শান্তিপুরে ৭৭ বছর ধরে আজও প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক দায়িত্ব পূরণ

পাঠক শূন্য পাঠাগার হলেও নদীয়ার শান্তিপুরে ৭৭ বছর ধরে আজও প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক দায়িত্ব পূরণ

মলয় দে নদীয়া :-
টানা ৭৭ বছর ধরে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক দায়িত্ব পূরণে আজও অব্যাহত নদীয়ার শান্তিপুরের সুভাষ পাঠাগার। এই উপলক্ষে গতকাল শতাধিক প্রান্তিক পরিবার এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষজনকে তুলে দেওয়া হয় শীত বস্ত্র। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর মঞ্জু দে বর্তমান কাউন্সিলর পম্পা বিশ্বাস রাজবংশী, নদীয়া জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ শান্তিপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর রঞ্জিত দে সহ বহু বিশিষ্টজন। ক্লাব সম্পাদক মলয় চক্রবর্তী এবং সভাপতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা এদিন স্মৃতির রোমন্থন করেন। রবীন্দ্র করলেন দেশাত্মবোধক এবং স্বাধীনতার গান।
স্বাধীনতা সংগ্রামী হরিদাস দের অনুপ্রেরণায় এবং এলাকার মানুষদের সহযোগিতায় নদীয়ার শান্তিপুর শ্যামচাঁদ রোডে ১৯৪৭ সালের ২৩ জানুয়ারি চালু হয় সুভাষ পাঠাগার। শুরুর সময় থেকে পাঠাগারের নিজস্ব ভবন ছিল না। তখন বিভিন্ন মানুষেরাই কেউ কখনও তাদের বাড়িতেই পাঠাগারকে জায়গা করে দিত। এরপর ১৯৮৩ সালের ২৩ জানুয়ারি অসমঞ্জ দে জমির ব্যবস্থা করে পাঠাগারের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন। এর দুবছর পরে অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে পাঠাগারের নিচের ভবনটি সম্পন্ন হয়। প্রয়াত অজয় দে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করতে সহযোগিতা করেন। পাঠাগারের উদ্বোধনের সময় ছিলেন শান্তিপুরের বিখ্যাত চিকিৎসক সীতানাথ প্রামানিক এবং কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন মন্ত্রী সরজিত বন্দোপাধ্যায়।
সেই থেকে আজও ক্রমবর্ধমান এই পাঠাগার।

আজও ২৩ জানুয়ারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত এই পাঠাগারে। ভোরবেলা করা হতো প্রভাত ফেরী। করা হতো নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান। আলো মালা দিয়ে সাজানো হতো পাঠাগার। পাড়ার লোকেদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যেত। তবে বর্তমানে প্রত্যেক বছর সরস্বতী পুজো আজও এই পাঠাগারে আয়োজন করা হয়। তাছাড়া পাঠাগারের সদস্য এবং পাশেই এক দুর্গোৎসব পরিচালন কমিটি মিলে প্রতিবছর আয়োজন করে দুর্গাপুজোর। শুধু তাই নয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হতো দেজ পাড়ার মাঠে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা এসে সেই খেলাগুলিতে অংশগ্রহণ করত। শুধু তাই নয় সেই সময় বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে এমনকি বিয়েতেও নবদম্পতিকে বই উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল সেই বইগুলি পাঠকের পড়া হয়ে গেলে দান করে দিয়ে যেতেন এই পাঠাগারেই, যার উল্লেখ আজও পাওয়া যায় পাঠাগারের ডায়েরির পাতায়।

তবে বর্তমানে সেই সমস্ত কিছুই আর দেখা যায় না। তার কারণ বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বই থেকে। এক সময় পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা অগুনতি থাকলেও বর্তমানে সেই সদস্য সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ এর কাছাকাছি। সেই কারণে পাঠাগারে সদস্য সংখ্যাও তুলনামূলক অনেকটাই কম এখন। আজও পাঠাগারে রয়েছে একাধিক মূল্যবান বই পত্র। তবে পাঠক সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। পাঠাগারের প্রবীণ সদস্যরা জানাচ্ছেন অতীতে পাঠাগারে তেমন পরিকাঠামো সুবিধা ছিল না তবে পাঠকদের উৎসাহ ছিল অনেক বেশি, বর্তমানে একাধিক উন্নয়ন হয়েছে পাঠাগারের পরিকাঠামো ব্যবস্থা তবে মানুষের সেই উৎসাহ এখন আর চোখে পড়ে না।

পাঠাগারে এসেছেন একাধিক বিখ্যাত লেখক। সাহিত্যিক অখিল নিয়োগী হঠাৎ স্বপনবুড়ো এই পাঠাগার থেকেই প্রকাশিত হওয়া লিখন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ করাও হয়েছিল। এছাড়াও পাঠাগারের ইতিহাসে জড়িয়ে রয়েছে সাহিত্যিক স্বপন গুহের মতো নামও। বর্তমানে পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। পুরনো বইগুলির যত্ন নেওয়া হয় নিয়মিত। এবং প্রতিবছর বইমেলাতে কেনা হয় বেশ কয়েক হাজার টাকার নতুন বইও।

বর্তমানে কোনরকমে টিকে রয়েছে পাঠাগার। আজও ২৬ জানুয়ারি পালন করা হয় এই পাঠাগারে। খরচ উঠে আসে কিছু সদস্যদের মাসিক চাঁদা এবং পাঠাগারের নিচে এক পোস্ট অফিস ভাড়া দেওয়ার ফলে সেই ভাড়ার টাকা দিয়েই। রয়েছে একজন লাইব্রেরিয়ান যাকে পাঠাগারের সদস্যেরাই নিজেদের পকেট দিয়ে দেন কিছু সান্মানিক। আসন্ন ২৬ জানুয়ারি পতাকা উত্তোলন ছাড়াও করা হবে দু:স্থদের শীতবস্ত্র প্রদান, এমনটাই জানালেন পাঠাগারের প্রবীণ সদস্য। শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে রয়েছে একাধিক পরিকল্পনা তাদের। রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে এলাকাবাসীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রধান ও সমগ্র এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

শত বাধা-বিপত্তি পার করে এই পাঠাগার যাতে এলাকা এবং এলাকাবাসীর উন্নতি সাধন করতে পারে সেটাই চান পাঠাগারের বর্তমান সমস্ত সদস্যরাই