এবার রাশে বুলেট ট্রেন চলবে শান্তিপুরে
মলয় দে নদীয়া:- জগত বিখ্যাত শান্তিপুরের রাস উপলক্ষে পূর্ব রেল শান্তিপুর শিয়ালদহ শাখায় প্রতি বছরই দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি বাড়তি ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করে থাকে চিরাচরিতভাবে, এমনকি ভাঙ্গা রসে সারারাত চলে ট্রেন।
তবে এবার চলবে বুলেট ট্রেন উদ্যোগ অবশ্য রেল কর্তৃপক্ষের নয়! শান্তিপুরের একটি পুজো উদ্যোক্তাদের।
রাস্তার উপর দিয়ে একবারে এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অবিরাম যাতায়াত করতে থাকবে এই ট্রেন। তবে ৬০ ফুটের মধ্যে সামনে এবং পিছনে দুটি ইঞ্জিনের সাথে বগি এবং মাঝে একটি বগি সহ ট্রেনের দৈর্ঘ্য 16 ফুট । কারণ কে সি দাস রোড চড়কতলা এলাকার পুজোর কর্মকর্তারা এ বছর ২৫ বছর উপলক্ষে তারা বানিয়েছেন এই বুলেট ট্রেন। সাথে অবশ্যই সিগন্যালিংক ব্যবস্থা লেভেল ক্রসিং ওভার গেট সব কিছু হুবহু ট্রেনের মতন এমনকি ট্রেনের লাইনের আর্থিং এবং ওভার হেডের ডিসি কারেন্ট এর সাহায্যে চলবে ট্রেন ।
এলাকারই এক যুবক প্রায় দীর্ঘ ৬ মাসের পরিশ্রমে তৈরি করলেন হুবহু বুলেট ট্রেনের আদলে একটি ট্রেনের মিনি ভার্সন। ট্রেন সাধারণত আমাদের দেশে যেভাবে চলে ঠিক একই ইলেকট্রিক পজিটিভ ও নেগেটিভ এনার্জির তার দিয়ে ইলেকট্রিকের পোল ও ট্রেনের লাইন বানিয়ে ঠিক একইভাবে চালানো হলো এই বুলেট ট্রেন। এমনকি ট্রেন যাওয়ার জন্য যে লাইন পাতা হয় সেটিও রাস্তার উপরেই কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ট্রেনটির নির্মাতা সুশান্ত কর্মকার জানান, ট্রেনটি রানিং চলবে ৬০ ফুট মত। এই ট্রেনের মধ্যে লাইট থেকে আরম্ভ করে একটি ট্রেনের মধ্যে যাবতীয় যা আনুষাঙ্গিক থাকে যেভাবে ট্রেনটিকে ইলেকট্রিক পাওয়ারের মাধ্যমে চালানো হয় ঠিক একই পদ্ধতিতে এই ট্রেন চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে। ট্রেনটির দুদিকেই রাখা হয়েছে ইঞ্জিন। ট্রেনটি প্রায় ১৬ ফুট লম্বা মোট তিনটি বগি বানানো হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ট্রেনটি বানাতে সময় লেগেছে প্রায় ছয় মাস সম্পূর্ণ ট্রেনটাই কাঠ এবং টিনের যাবতীয় সামগ্রী দিয়ে তৈরি।
তিনি এও জানান, পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। তিনি শান্তিপুর কলেজে ইলেকট্রিক বিভাগে চাকরি করেন। এর আগের বছর নিজের হাতে তৈরি হেলিকপ্টার বানিয়ে তার মধ্যে প্রতিমা স্থাপন করে সেটিকে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শান্তিপুরবাসীকে। তবে এবার ঠাকুর আলাদা হলেও প্রদর্শনী হিসেবে ট্রেনটিকে রাখা হয়েছে।
রাস্তার ওপরে কাঠের উঁচু সেতু নির্মাণ করে তার উপরে তৈরি করা হয়েছে এই রেলের লাইন। তার প্রধান কারণ হিসেবে জানা যায় রাস্তায় পথ চলতি মানুষ এবং সেই রাস্তা সংলগ্ন যে সমস্ত দোকান রয়েছে তাদের যাতে কোন রকম অসুবিধা না হয় সেই কারণেই এইরকম করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তাছাড়া উঁচু করে করলে দর্শনার্থীদের ভিড় হলেও তা দেখতে কারোর কোনও অসুবিধা হবে না। এমনকি ওই রাস্তা সংলগ্ন ব্যবসাদাররাও জানাচ্ছেন এই মন্ডপ নিয়ে তাদের কোন অসুবিধা নেই। কারণ শান্তিপুরের রাস ঐতিহ্যমন্ডিত, তারা প্রত্যেকেই হ্রাসের কয়েকটি দিন ব্যবসার কথা মাথায় না রেখে পুজোতেই জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেন।
অন্যদিকে সুশান্তবাবুর পরিবারও বিষয়টি তে যথেষ্ট গর্বিত।
বিগ্রহ হয় এখানে লোকনাথ ঠাকুরের। তবে এই বিগ্রহ পুজোর পরে বিসর্জন হয় না। কোনও না কোনও সদস্যের বাড়িতে সেই বিগ্রহ সারা বছর ধরে থাকে। ৪-৫ বছর অন্তর অন্তর ঠাকুর বানানো হয়।
তবে দর্শনার্থীদের আকর্ষণের বিষয় হলেও পূজা উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন যেহেতু তাদের জায়গার অভাব তাই পথের পাশেই করতে বাধ্য হয়েছেন। সেক্ষেত্রে ভাঙ্গা রাসের শোভাযাত্রায় এই পথেই নতুন পাড়া বারোয়ারি তাদের সুবিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে যান তাই তাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে কারণে ভাঙা রাসের দিন খুলে ফেলা হবে। তবে আগামীতে মহাকাশের কথা ভাবছে পুজো উদ্যোক্তারা।