অত্যাধুনিক চাষে লাভের সুলুক সন্ধান কৃষকদের প্রশিক্ষণ শিবির
মলয় দে নদীয়া:-
কৃষকরা চাষ করে লাভবান হচ্ছে না । ফলে তারা মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়ছে । একদিকে বাজারে সার ওষুধের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে ফসল তোলার পর বাজারে গিয়ে কম দামে বিক্রি করা। । এইজন্য দিনের পর দিন কৃষকরা জমি চাষ থেকে বিরত হচ্ছেন । বাধ্য হয়ে ফসল ও সবজি চাষ বন্ধ করে দিয়ে লাগাচ্ছেন আমবাগান কেউ লাগাচ্ছেন কাঁঠাল গাছ । হতাশাগ্রস্ত চাষীদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ফার্মার প্রডিউসার কোম্পানি । কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে কৃষ্ণগঞ্জ ফার্মার প্রডিউসার কোম্পানির ডিরেক্টর বিদ্যুৎ বিশ্বাস বলেন তাদের কোম্পানির এখন সদস্য সংখ্যা প্রায় এগারোশো । তাদের কথা চিন্তা করে এই কোম্পানি নদীয়ার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয় ,ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের সাথে যোগাযোগ করে । তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ডঃ মালবিকা দেবনাথ ও ডঃ কৌশিক মুখোপাধ্যায় কৃষ্ণগঞ্জের কর্মশালায় আসেন । আধিকারিকরা কৃষকদের কাছ থেকে তাদের হতাশার কারণগুলো জানতে চান । কৃষকদের পক্ষ থেকে অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন আমরা বেগুন চাষ করে পোকা ঠেকাতে পারি না । পাশাপাশি ভালো জাতের বেগুন লাগানো সত্বেও ফলন হওয়ার সময় সেই অর্থে ভালো বেগুন হচ্ছে না, আমাদের করণীয় কী ? কৃষকদের কাছ থেকে কথা শোনার পর ডঃ মালবিকা দেবনাথ বলেন কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং তাদের পরামর্শ দেবার জন্য কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিটি ব্লকে কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে । কারণ অত্যধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে । জমিতে সঠিকভাবে চাষ করতে গেলে জৈব সার ও বায়োমেট্রিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে । এর ফলে জমির উর্বরতা যেমন বাড়বে তেমনি যে সমস্ত সবজি চাষে প্রচুর পরিমাণে পোকা আক্রান্ত করে সেই সমস্ত বায়োমেট্রিক ওষুধ ব্যবহার করলে তা রোধ করা যাবে। এই ব্যবস্থাপনার ফলে চাষী একদিকে যেমন লাভবান হবেন ,অন্যদিকে বিষাক্ত জিনিস থেকে মানুষের জীবন বাঁচবে । বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (মৃত্তিকা বিজ্ঞান) ডঃ কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন প্রথমত জমির মাটি পরীক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে মাটিতে কি কি ঘাটতি রয়েছে । সেই হিসাবে জমির পরিচর্চা করতে হবে তারপর ফসল লাগাতে হবে । অবশ্যই জৈব সার ও বায়োমেট্রিক ওষুধ স্প্রে করতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই । পাশাপাশি তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন অল্প সময়ের মধ্যে অল্প জায়গায় বেশি মুনাফা লাভের জন্য মাশরুম চাষের জুরি মেলা ভার । বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং তাদের নির্দেশ অনুসারে যদি এই চাষ করা যায় কৃষক অনেক বড় চাষের থেকেও অল্প জমিতে অল্প সময়ে বেশি মুনাফা লাভ করবে । কুমড়ো , ভুট্টা ,পটল, উচ্ছে বিভিন্ন চাষের ক্ষেত্রেই জৈব সারের গুরুত্ব অপরিসীম । তিনি আরো বলেন সামনের এমন একটা ভয়ানক দিন আসছে তখন জমিতে কিন্তু চাষ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে । কারণ অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলেই জমি তার নিজস্বতা হারাচ্ছে । একমাত্র জমিকে পুনরুদ্ধার করার উপায় হল জৈব সার ও বায়োমেট্রিক ওষুধ। এর ফলে জমির উর্বরতা যেমন বাড়বে তেমনি কৃষকরা লাভবান হবেন । তিনি এটাও বলেন কৃষকদের উদ্দেশ্যে এখন আপনাদেরকে আমরা বলছি নিজেরা যদি জমির উর্বরতার কথা চিন্তা না করেন কয়েক বছর পর আপনারা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির এই জৈব সার কিনে নিয়ে এসে জমি চাষ করতে বাধ্য হবেন । যেটা আপনারা এখন এক টাকায় করতে পারছেন তখন একই জিনিস বাজার থেকে ১০ টাকায় কিনতে বাধ্য হবেন । ডঃ মালবিকা দেবনাথ বলেন আমাদের পরামর্শ মত আপনারা বেগুন চাষ করুন দেখবেন বেগুনের কোন পোকা লাগবেনা, কোন সাদামাছি লাগবেনা । বেগুন প্রথমদিকে যে রকম নরম তুলার মত হবে ঠিক ছয় মাস পরেও গিয়ে দেখবেন একই রকম বেগুন হবে । কৃষকরা আধিকারিকদের কথায় সন্তুষ্ট বলে জানালেন । সীমান্তের কৃষক বিজন বিশ্বাস বলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের কথা শুনে আমরাও সবজি চাষ করেছিলাম । প্রথমদিকে আমরা জৈব সার ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চাষ করে কম লাভবান হলেও পরবর্তীকালে আমরা ভালো মুনাফা পেয়েছি , বর্তমানেও পাচ্ছি। ।





