শান্তিপুরের সবচেয়ে পুরানো রায় বাড়ির দুর্গাপুজো এ বছরে কোনমতে ব্যবস্থা হলেও, পরিবারের দুশ্চিন্তা আগামীর
মলয় দে নদীয়া :-শান্তিপুর মতিগঞ্জ মোড়, পাবলিক লাইব্রেরী, বাগআঁচড়া হরি নদীর বিল, নানান গুরুত্বপূর্ণ জমি জনসাধারণের সেবার উদ্দেশ্যে দান করলেও আজ শান্তিপুর রায় বাড়ির পুজোই অনিশ্চয়তার মুখে।
একসময় একই পরিবারের ১৫০ -২০০ জন বাস করার সংখ্যা সাত আট বছর আগেও ৫০-৬০ জন ছিলো, বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ১০-১২ জনে। দূর দূরান্তে যারা থাকেন তারা যে পরিমাণ অর্থ সহযোগিতা করে তা দিয়ে বিরাটাকার মন্দির সারা বছর পরিচর্যার পর দূর্গা পূজার মতো বিরাট খরচের অবকাশ থাকে না। তবে এবারেও ওই আত্মীয়দের মধ্যেই কোন এক সহযোগী ব্যক্তি এগিয়ে আসার ফলে বন্ধ হওয়া সিদ্ধান্তর আপাতত বাতিল হয় এবারের জন্য। তবে পরিবারের দুশ্চিন্তা সরকারি সহযোগিতা না পেলে এভাবে আর কতদিন? এককালে দান করা জমিতে স্মৃতিফলক তো দূরে থাক কোথাও এতটুকু নাম পর্যন্ত নেই,। প্রশাসনের মনে না থাকলেও মানুষের মনে রয়ে গেছে, তাইতো আজও মতিগঞ্জ, মতি বাবুর বিল , সুরঙ্গ পথে রায় বাড়ি থেকে লাইব্রেরীর নানান স্মৃতিচারণ।
অত্যন্ত জাগ্রত এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে নানান অলৌকিক কাহিনী, শোনালেন তা পরিবারের প্রবীণরা। জানালেন জন্মাষ্টমীর দিন থেকে আস্তে আস্তে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রথমে গঙ্গা মাটি মেখে কাঠামোর উপরের দেওয়া হয়,তারপর একে একে ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে প্রতিমা। নদীয়া জেলার মধ্যে প্রাচীনতম পুজো এই রায় বাড়ির দুর্গাপুজো। গৌড়বঙ্গে জমিদারি ছিল রায় পরিবারের, গৌর চাঁদ রায় ছিলেন তাদের পূর্বপুরুষ ,তার হাতেই ছিল জমিদারির রাজত্ব। পরবর্তীকাল মুঘলদের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে বাড়ির বিগ্রহ গৌর হরি ঠাকুর কে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে চলে আসেন চুঁচুড়ায়, সেখান থেকে পালিয়ে এসে শান্তিপুরের বাগ আচড়ায় তারপর শান্তিপুরে এসে পাকাপাকিভাবে বসবাস করেন। সেসময় তাদের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। শান্তিপুরে বসবাস করবার বেশ কিছুদিন পর বর্ধমানের রাজার তহসিলদার হিসেবে কাজ করতে থাকেন, তারপরেই আস্তে আস্তে উন্নতি সাধন করতে থাকেন। একদিন গরমকালে ভর দুপুর বেলা গৌর হরি ঠাকুর কে পুজো দেবার সময় হঠাৎই এক মহিলা এসে জল খাবেন বলে, জল চান । তখন বাড়ির যিনি কর্তা মা জল দিতে গেলে বলা হয় গঙ্গাজল দিতে, সেই জল খেয়েই তখনকার মত অদৃশ্য হয়ে যান । রাতেই স্বপ্নদৃষ্ট হন তারপরে থেকেই পূজিত হন রায় বাড়িতে। সে সময়ে আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে কুলোর উপর প্রতিমার ছবি এঁকে পূজা শুরু করেন তা থেকেই এই দেবীর নাম হয় কুলো পতি। আনুমানিক ৫০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো। দেবী এখানে একটু অন্যরকমের, দেবীর সাথে লক্ষ্মী গণেশ কার্তিক সরস্বতী কেউই থাকেন না। পুজোর আগের দিন আনন্দ নাড়ু করবার প্রচলন আছে । পুজোর দিনে কচুর শাক ,ওলের ডালনা এবং নবমীতে মাছ ভোগ দেবার রেওয়াজ আছে। পশু বলির বদলে আখ এবং কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।