শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদে আলাবামা থেকে আগত গবেষক প্রতিনিধিদের আগমন তাঁতশিল্প ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপি তথ্য সংগ্রহ ঘিরে প্রায় শেষ হওয়া হস্ত শিল্পে আবারো ক্ষীন আশার আলো
মলয় দে নদীয়া :-আলাবামা থেকে বিশেষ গবেষণার উদ্দেশ্যে ভারতে এসে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করলেন কলকাতার বাসিন্দা, বর্তমানে আলাবামা প্রবাসী ড. সঞ্জয় সিংহ ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের সঙ্গে আরও তিনজন আলাবামা-নিবাসী গবেষক ও এক জন সংস্কৃত পণ্ডিতও শান্তিপুরে উপস্থিত হন। তাঁরা মূলত অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ভারতে এলেও শান্তিপুরের সঙ্গে বিশেষ একটি ঐতিহাসিক যোগসূত্র তাঁদের আকৃষ্ট করে।
হেলেন কেলারের জন্মস্থান আলাবামা। বহু বছর আগে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদে হেলেন কেলারকে নিয়ে গবেষণা ও প্রদর্শনীর খবর তাঁদের কাছে পৌঁছায়। সেই সূত্র ধরেই তাঁরা আগ্রহ নিয়ে এই গ্রন্থাগার পরিদর্শনে আসেন।
গবেষণার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপুরের শতাব্দী প্রাচীন তাঁতশিল্প। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তাঁতশিল্পীদের কাজ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, সেই দলেরই অংশ এই গবেষকরা। শান্তিপুরের তাঁতশিল্পের বৈশিষ্ট্য, বিশেষত হাতে বোনা শাড়ির ঐতিহ্য, নকশা ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার জন্য তাঁরা শহরজুড়ে বিভিন্ন তাঁতবাড়ি ঘুরে দেখেন। তাঁদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল শান্তিপুরে কি এমন কোনও অনন্য, বিরল বা লুপ্তপ্রায় তাঁতের শাড়ি তৈরি হয়, যা হাতে বোনা এবং বিশেষ শিল্পরীতির প্রতিনিধিত্ব করে।
শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদে পৌঁছে তাঁরা শুধু গ্রন্থাগার নয়, এর সঙ্গে যুক্ত ঐতিহ্যের গভীরতা দেখেই অভিভূত হন। এখানে সংরক্ষিত আছে দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন পুঁথি, ১৮৬৪ সালের পুরোনো পত্রিকা, ১৭২ বছরের সংরক্ষিত নানা দলিল, এবং শান্তিপুরের পুরোনো আমলের কিছু হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি যা তাঁরা অত্যন্ত যত্ন ও বিস্ময়ের সঙ্গে পরিদর্শন করেন।
সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক সুশান্ত মঠ জানান, অতিথিরা সময়ের অভাবে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি, তবে তাঁরা আবার শান্তিপুরে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। পাশাপাশি শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ গবেষণার কাজে পাশে থাকার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থভান্ডার এবং বহু সংরক্ষিত নথি ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে, যা বিদেশি গবেষকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলছে। শান্তিপুরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে চর্চার আলোয় উঠে এল এই সফরের হাত ধরেই।





