প্রতিবছরই মে মাসে আছড়ে পড়ছে ঘূর্ণিঝড়, বাড়ছে চিন্তা প্রায় প্রতিবছর মে মাসে বাংলায় আছড়ে পড়ছে বড় ঘূর্ণিঝড়। কোনও কোনও ঝড় মারাত্মক আকার ধারণ করে ব্যাপক প্রভাব ফেলে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। কিন্তু বারবার মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় আসার কারণ কী? উত্তর খুঁজছেন পরিবেশবিদরা। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৩টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে উপকূলে। এরমধ্যে সাতটি ঝড় আসে মে মাসে। জলবায়ু ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মে মাস সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ হয়ে উঠছে। এর ফলে মুর্শিদাবাদ জেলায় আম ও লিচু চাষিরা পড়েছেন ব্যাপক সমস্যায়। আম পাকার আগের মুহূর্তে প্রায় প্রতিবছরই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। কীভাবে এই ক্ষতি থেকে বাঁচবেন, তারই উপায় খুঁজছেন চাষিরা।
কিন্তু বারবার মে মাসেই কেন এত ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হচ্ছে? সেব্যাপারে আবহাওয়াবিদরা বলেন, এপ্রিল মাসে টানা তাপপ্রবাহের পর মে মাসেও সূর্যের তাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। এই সময় আকাশে মেঘের আনাগোনা বেশ কম থাকে। ফলে সূর্যের তাপ ভূখণ্ড তো বটেই, সমুদ্রের জলকে অস্বাভাবিক উত্তপ্ত করে তোলে। এই ধরনের আবহাওয়ায় মে মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করছে। গত চার বছরে একাধিকবার এই ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় উম-পুন, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় যশ, ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মোখা আছড়ে পড়েছিল মে মাসেই। এবারও ঘূর্ণিঝড় রেমাল বঙ্গোপসাগরের যে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সাধারণত সাগরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মতো পরিবেশ তৈরি হয়। ফলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল সৃষ্টি হওয়ার পর খুব দ্রুত উপকূলের দিকে এগিয়ে আসে। আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, সাধারণত এপ্রিলে বঙ্গোপসাগর এলাকায় তাপপ্রবাহ থেমে থেমে আসে। দেশের মাঝের ভূখণ্ডে কালবৈশাখী ও সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়। এরফলে বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা তাপ কমে আসে। কিন্তু গত এক যুগ ধরে সাগরে নিম্নচাপের প্রবণতা কমে যাচ্ছে। নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তা দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে। এর আগে ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই ধরনের আবহাওয়া দেখা গিয়েছিল। ওই সময় এপ্রিলে প্রচণ্ড উষ্ণতা আর মে মাসে প্রায় প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় হতো।
পরিবেশবিজ্ঞানী সুজীব কর বলেন, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়েছে। এছাড়া উত্তর ভারত এই মুহূর্তে আবদ্ধ। কোনও বায়ু ঢুকতে পারছে না। গ্রীষ্ণকালে বায়ু আসার কথা বঙ্গোপসাগর থেকে। এখন বায়ু আসছে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম থেকে। যেকারণে তীব্র শুষ্ক বায়ু প্রবেশ করছে জলভাগে। সেই বায়ু জলীয় বাষ্প সঞ্চয় করতে চাইছে। সেটা যখন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের দিকে তীব্রগতিতে প্রবেশ করে তখন বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আসা জলীয় বাষ্পের দুটি বৈপরীত্য অবস্থা তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।